দুর্নীতির স্বার্থে বিগত সরকার গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করেছিল বলে মন্তব্য করেছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।আজ শনিবার এফডিসিতে দুর্নীতি প্রতিরোধে করণীয় নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দুর্নীতি প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে জাতীয় সংসদ। কিন্তু বিগত সরকার সংসদকে পুতুল নাচের নাট্যশালায় পরিণত করায় সেই সংসদ দুর্নীতি প্রতিরোধে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। কর্তৃত্ববাদী শাসনের কারণে বিগত সময়ে ব্যাপক মাত্রায় দুর্নীতির প্রসার হয়েছে। দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়েছিল। এমন কোনো অপরাধ ঘটেনি যেখানে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সম্পৃক্ততা ছিল না। দুর্নীতির স্বার্থে গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করা হয়েছে। ’
তিনি বলেন, ‘যারা আইনের রক্ষক হওয়ার কথা ছিল তারা ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নেতৃত্বের দুর্বলতা এবং রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে প্রতিষ্ঠানটি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদকের পুনর্গঠনের প্রয়োজন। এছাড়াও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, সিআইডি, অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস এবং বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের যথাযথ সংস্কার করতে হবে। ’
ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুক্তির সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির যে অভিযোগ এসেছে তা নাকচ করা যায় না। রাষ্ট্র এই অভিযোগ বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারে। বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে তা দেশের প্রচলিত আইন ও আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুযায়ী ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এক্ষেত্রে পাচারকৃত দেশের সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের আইনি সমঝোতা করতে হবে। ’
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘সর্বগ্রাসী দুর্নীতি বাংলাদেশের ইতিহাসের বড় কালো দাগ। সর্বস্তরে দুর্নীতি ক্যান্সারের রূপ ধারণ করেছে। দুর্নীতির এই ক্যান্সার অপসারণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে অন্তর্বতীর্কালীন সরকার। আমরা দেখেছি দুর্নীতিবাজরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর তাদের বিদেশ যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতো দুদক। প্রকৃত দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় না এনে রাজনৈতিকভাবে হয়রানির জন্য বিরোধীমতের লোকদের নামে মামলা, জেল—জরিমানা করতে দেখা গেছে দুদককে। যারা দুদকের মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার হচ্ছে তাদের হয়রানি মুক্ত করা উচিত। ’
তিনি বলেন, ‘আমরা সকলে জানি কিভাবে বিগত সরকার বিনা ভোটে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের সকল প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ভেঙে দিয়েছিল। নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালত পর্যন্ত বিচার ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসনসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশে ব্যবহার করা হয়েছে। গুম—খুন, আয়নাঘরের সৃষ্টি করে মানুষের মধ্যে ভীতি তৈরি করেছিল। সবই করা হয়েছে বহুমাত্রিক দুর্নীতির ওপর ভর করে। বিগত সরকার তার পতনকালে দেশের জনগণের কাঁধে ১০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বৈদেশিক ঋণের বোঝা রেখে গেছে। দেশের বর্তমান অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ প্রায় ৬ লাখ কোটি টাকা। মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতি হয়েছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ব্যাংক—বীমা, পানি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পরিবহন, যোগাযোগ, কৃষিসহ সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতির বেড়াজালে আবদ্ধ ছিল বিগত সরকার। শেয়ার বাজার কারসাজির মাধ্যমে কিভাবে মানুষকে রাস্তার ফকির বানানো হয়েছে তা সকলের জানা আছে। ’
কিরণ আরও বলেন, ‘কুইক রেন্টালের নামে বিদ্যুৎ খাতে যে দুর্নীতি হয়েছে তা বাংলাদেশের ইতিহাসে বৃহৎ দুর্নীতির একটি খণ্ডিত চিত্র। বিগত সরকারের আমলে বলা হয়েছিল ফেরি করে বিদ্যুৎ দেওয়া হবে। এত বিদ্যুৎ গেল কোথায়? মফস্বলে এখনো প্রতিদিন গড়ে ৬/৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকতে হয়। এখন এমন এক অবস্থা বাতি না জ্বালালেও মিটার ঘুরে। বিদ্যুৎ বিল বাড়তে বাড়তে এমন এক পর্যায়ে এসেছে যা সাধারণ মানুষের সামর্থের বাইরে চলে গেছে। আমার দেশের কৃষক, দিনমজুর, রিকশাচালক, ঠেলাগাড়িওয়া কোনো দুনীর্তি করে না। যারা রাষ্ট্র বা সরকারের সুবিধাভোগী তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ। দেশে আয় বৈষম্য দূর করে দুর্নীতিমুক্ত করতে না পারলে ছাত্র জনতার এই সফল বিপ্লব ধরে রাখা যাবে না। ’
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ‘প্রাতিষ্ঠানিক নজরদারি অপেক্ষা ব্যক্তি সচেতনতাই দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে পারে’ শীর্ষক প্রস্তাবে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির বিতার্কিকদের প্রতিযোগিতা শেষে চ্যাম্পিয়ন দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র দেওয়া হয়
prothomasha.com
Copy Right 2023