চলতি বছরে এই জেলায় ৭১ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে শর্ষের আবাদ হয়েছে। ২০২২ সালে চাষ হয়েছিল ৩৭ হাজার ৫৪৩ হেক্টর জমিতে।চাহিদা ও মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় মানিকগঞ্জে তিন বছরে শর্ষের আবাদ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর শর্ষের দাম কম। বাজারে বর্তমানে প্রতি মণ শর্ষে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গতবার ছিল ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা।
স্থানীয় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, এ বছর মানিকগঞ্জে যে পরিমাণ জমিতে শর্ষের আবাদ হয়েছে, তাতে আশা করা যাচ্ছে, কমপক্ষে ৪ কোটি ৪১ লাখ ৫৭ হাজার ৬০০ লিটার তেল পাওয়া যাবে, যা এই জেলায় ভোজ্যতেলের মোট চাহিদার চেয়ে প্রায় চার গুণ বেশি। মানিকগঞ্জের সাতটি উপজেলাতেই শর্ষের আবাদ হয়ে থাকে। চরাঞ্চলের পাশাপাশি পতিত জমিতেও শর্ষের আবাদ দিন দিন বাড়ছে। জেলা কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে এই জেলায় ৭১ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে শর্ষের আবাদ হয়েছে। আর শর্ষে উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৩৯৪ মেট্রিক টন। গত বছর, মানে ২০২৩ সালে ৪৭ হাজার ৫৪৩ হেক্টর জমিতে শর্ষে আবাদ করে ৭২ হাজার ২৬৫ মেট্রিক টন শর্ষে উৎপাদন হয়। ২০২২ সালে পুরো জেলায় ৩৭ হাজার ৫৪৩ হেক্টর জমিতে শর্ষের আবাদ হয়েছিল। আর শর্ষে উৎপাদন হয়েছিল ৪৮ হাজার ৮০৬ মেট্রিক টন। সেই হিসাবে দেখা যায়, গত তিন বছরে এই জেলায় শর্ষে চাষ বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
মানিকগঞ্জ জেলায় সবচেয়ে বেশি আবাদ করা হয় বারি-১৪ জাতের শর্ষে। এ ছাড়া নতুন জাতের বারি-১৪, বারি-১৭ ও বারি-১৮ জাতের শর্ষের আবাদ করা হয়। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, শর্ষে উৎপাদনে সারা দেশের মধ্যে মানিকগঞ্জ জেলা তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। সিরাজগঞ্জ প্রথম, দ্বিতীয় টাঙ্গাইল। এদিকে মানিকগঞ্জে শর্ষের আবাদ বেড়ে যাওয়ায় ক্ষতিকর তামাকের চাষ কমেছে।জেলা কৃষি অধিদপ্তর থেকে পাওয়া হিসাবমতে, মানিকগঞ্জে এবার শর্ষে উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৩৯৪ মেট্রিক টন। প্রতি ১০০ কেজি শর্ষে থেকে প্রায় ৪০ লিটার তেল পাওয়া যায়। সে হিসাবে চলতি বছর এই জেলায় তেল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ কোটি ৪১ লাখ ৫৭ হাজার ৬০০ লিটার, যা এখানকার চাহিদার তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি। মানিকগঞ্জ জেলায় বছরে ভোজ্যতেলের চাহিদা প্রায় ১ কোটি ৫৩ লাখ লিটার।
সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, জেলা সদর ও সিঙ্গাইর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অধিকাংশ জমির শর্ষেগাছ তোলা হয়ে গেছে। কিছু কিছু স্থানে জমি থেকে শর্ষেগাছ তোলা হচ্ছে।গত বছর তিন বিঘা জমিতে শর্ষের আবাদ করেছিলেন মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার দিঘী গ্রামের চাষি জলিল মেহেদী। চাহিদা ও দাম বাড়ায় এ বছর তিনি সাড়ে ৪ বিঘায় শর্ষের আবাদ করেছেন। জলিল মেহেদী বলেন, ‘এখন শর্ষের তেলের চাহিদা বাড়ছে। সে জন্য শর্ষের আবাদ বাড়িয়েছি। তবে এ বছর শর্ষে দাম গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম।’
স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা জানান, এ বছর অনাবাদি জমির পাশাপাশি চরাঞ্চলের পতিত জমিতেও শর্ষের আবাদ করা হয়েছে। জলাবদ্ধতা দূরীকরণের মাধ্যমে নিচু জমিতেও শর্ষে আবাদের সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া তামাকের পরিবর্তে শর্ষে চাষ এবং সাথি ফসল হিসেবেও অনেকে জমিতে শর্ষে চাষ করেন। সব মিলিয়ে গত তিন বছরে এ জেলায় শর্ষের আবাদ বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।কর্মকর্তারা বলেন, দেশে আমদানির্ভর সয়াবিন তেল সাধারণত মিশ্রজাতীয় সয়াবিন। এই তেল খাওয়ায় গ্যাস্ট্রিক, হৃদ্রোগসহ বিভিন্ন অসুখ হয়ে থাকে। অন্যদিকে শর্ষের তেল মানবদেহের জন্য বেশি উপকারী। সে জন্য অনেক ভোক্তা দিন দিন শর্ষে তেলের দিকে ঝুঁকছেন। ফলে শর্ষের তেলের চাহিদা বেড়েছে।
মানিকগঞ্জ জেলা শহরের দুধবাজার এলাকার তেলকলের মালিক দেলোয়ার হোসেন বলেন, দিন দিন শর্ষের তেলের চাহিদা বাড়ছে। গত বছর এ সময়ে দিনে গড়ে ৪০ থেকে ৫০ লিটার শর্ষের তেল বিক্রি হলেও এখন ১৪০ থেকে ১৫০ লিটার তেল বিক্রি হয়ে থাকে। এখন প্রতি লিটার শর্ষের তেল ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবু মো. এনায়েত উল্লাহ বলেন, দেশে ভোজ্যতেলের মোট চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশই আমদানি করতে হয়। এ জন্য প্রতিবছর প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। দেশে এখন উন্নত জাতের শর্ষের আবাদ হচ্ছে। এতে ফলনও ভালো হওয়ায় তেলও বেশি পাওয়া যাচ্ছে। সেই সঙ্গে দিন দিন শর্ষের তেলের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং দামও মোটামুটি ভালো হওয়ায় কৃষকেরা শর্ষে চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
prothomasha.com
Copy Right 2023