রাজধানীর তেজগাঁও ও গোপীবাগে দুটি ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় হওয়া মামলার তদন্ত নিয়ে পুলিশ এখনো অন্ধকারে। তেজগাঁওয়ে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিসংযোগের প্রায় দুই মাস পার হয়েছে। আর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিসংযোগের এক মাসের বেশি সময় পার হয়েছে। কিন্তু দুই মামলার কোনোটির তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই। দুই ট্রেনে অগ্নিসংযোগকারীদের এখন পর্যন্ত চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ। এ অবস্থায় মামলা দুটির তদন্তভার ঢাকা রেলওয়ে থানা-পুলিশ (জিআরপি) থেকে পৃথক দুই সংস্থায় স্থানান্তর করা হচ্ছে। রেলওয়ে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অপর মামলাটি সম্পর্কে আনোয়ার হোসেন বলেন, বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিএনপি নেতা নবীউল্লাহ নবী ও যুবদল নেতা কাজী মনসুর আলমকে আটক করে ডিবি। পরে এই মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তার দেখায় ঢাকা রেলওয়ে থানা-পুলিশ। তাঁদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রিমান্ড শেষে তাঁদের কারাগারে পাঠানো আদালত। রিমান্ডে তাঁরা বলেছিলেন, গত ৪ জানুয়ারি নাশকতার পরিকল্পনার বিষয়ে হোয়াটসঅ্যাপে ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এতে যুবদলের এক নেতা ট্রেনে আগুন দেওয়ার দায়িত্ব নেন। কিন্তু যুবদলের এই নেতাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাঁকে গ্রেপ্তার করা গেলে হয়তো অগ্নিসংযোগকারীদের ব্যাপারে জানা যেত।
রেলওয়ে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন বলেন, মামলা দুটি পৃথক দুই সংস্থায় স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিসংযোগের মামলাটির তদন্তভার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) যাবে। বেনাপোল এক্সপ্রেসে ট্রেনে অগ্নিসংযোগের মামলাটি পাঠানো হবে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই)। মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে আগুন লাগানোর ঘটনায় গত ২১ ডিসেম্বর র্যাব-১ সন্দেহভাজন হিসেবে ৯ জনকে আটক করার কথা জানিয়েছিল। তবে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। র্যাব বলেছে, ট্রেনে আগুন দেওয়ার সঙ্গে তাঁদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে গত বুধবার যোগাযোগ করা হলে র্যাব-১-এর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘মোহনগঞ্জ ট্রেনে আগুন লাগানোর মামলার তদন্তে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।’ মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে আগুন দেওয়ার সঙ্গে জড়িত চারজনের নাম জানতে পারার কথা র্যাব-৩-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল। গত ২১ ডিসেম্বর কমলাপুর রেলস্টেশনে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩-এর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, এই চারজনের দুজন সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মী। বাকি দুজন ভাসমান (নির্দিষ্ট ঠিকানা নেই) ব্যক্তি। পরে অবশ্য আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছিলেন, তাঁরা যাঁদের নাম জেনেছিলেন, তাঁদের সঙ্গে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজে পাওয়া ছবি মেলেনি।
গত ২১ ডিসেম্বর ডিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে আগুন লাগানোর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের পরিচয় পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। পরে ডিবির কর্মকর্তারা বলেন, অন্য একটি মামলায় গ্রেপ্তার যুবদল নেতা মুকিতের কাছ থেকে ট্রেনে অগ্নিসংযোগকারীদের বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। কিন্তু এখন ডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, এই মামলার তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই। অন্যদিকে গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিএনপি নেতা নবীউল্লাহ ও যুবদল নেতা মনসুর জড়িত বলে দাবি করে ডিবি। এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য ডিবি তাঁদের ঢাকা রেলওয়ে থানা-পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। তবে এই মামলায় অগ্নিসংযোগকারীদের এখন পর্যন্ত শনাক্ত করতে পারেনি ঢাকা রেলওয়ে থানা-পুলিশ।
prothomasha.com
Copy Right 2023