পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ সম্বন্ধে করা এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্নীতি দমক কমিশনের (দুদক) দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ২৩শে মে আদালত বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দের আদেশ দিলেও আগেই টাকা সরিয়ে ফেলেন তিনি।এসব অ্যাকাউন্টে কী পরিমাণ টাকা ছিল, তা জানা যায়নি। ব্যাংক অ্যাকাউন্টের থেকে টাকা সরানোর মতো করে জমি, ফ্ল্যাট বা অন্য কোনও সম্পত্তিও হস্তান্তর করেছে কি না, সেরকম কোনও তথ্যও পাওয়া যায়নি। এমনকি, তিনি দেশে আছেন কি না, তা নিয়েও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। শোনা যাচ্ছে, পরিবারসহ বেনজীর আহমেদ এখন দুবাইতে অবস্থান করছেন।
এতে বলা হচ্ছে, অ্যাকাউন্ট জব্দ হতে পারে, বিষয়টি তিনি আগেই জেনে গিয়েছিলেন, না কি ধারণা থেকে সরিয়ে ফেলেছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে বেনজীরের সম্পত্তির বিষয়ে যেসব সরকারি সংস্থা খোঁজ রাখছে, তাদের মাঝে একজন কর্মকর্তা বলেন, “গত সপ্তাহে তার অ্যাকাউন্টগুলো ফাঁকা করা হয়েছে।”“এর আগের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, যখনই কেউ বুঝতে পারেন তাকে ধরার চেষ্টা চলছে, তখনই তিনি টাকা সরিয়ে ফেলেন। অবশ্য টাকা তুললেও নগদে রেখেছেন, না কি অন্য কারও অ্যাকাউন্টে জমা করেছেন, তা বের করা সম্ভব,” যোগ করেন ওই কর্মকর্তা।
দেশে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের হাজার কোটি টাকার সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাই দেশে না কেবল, বিদেশেও তার ও তার পরিবারের নামে সম্পত্তি আছে কিনা, দুদক এখন সেসবের খোঁজও চালাচ্ছে। তবে এর মাঝেই আরেকটি তথ্য সামনে এসেছে যে বাড্ডার একটি অভিজাত আবাসিক এলাকায় বেনজীর আহমেদের সাত তলা একটি ভবন আছে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে দুদক তদন্ত করছে। আরও তদন্ত হবে। মামলা হলে তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। অনেকে ভাবছে, বেনজীর আহমেদের বাড়ি টুঙ্গিপাড়া, সে ক্ষমা পেতে পারে। কিন্তু তা হবে না।”এদিকে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ আছে। তার ওবায়দুল কাদের বলেন, “যিনি সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন, তিনিও যদি অপরাধী হন, তার বিরুদ্ধেও দুদক তদন্ত করতে পারবে। অপরাধী হলে শাস্তি পেতে হবে।”
এ প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, “পুলিশের সাবেক আইজিপি কিংবা সাবেক সেনাপ্রধান…তারা দু’জনই দু’টি করে সংস্থার প্রধান ছিলেন। ফলে তারা যেসব সংস্থার প্রধান ছিলেন সেসব সংস্থার বিরুদ্ধে মানুষের আস্থার সংকট আরও ঘনীভূত হবে। তবে দুদক যে প্রক্রিয়া শুরু করেছে এটা যেন লোক দেখানো না হয়।”বড় ধরনের দুর্নীতিতে জড়ানোর পরও গত কয়েক বছরে দেশে দায়মুক্তির অনেক ঘটনা ঘটেছে। এমন পরিস্থিতিতে উঠেছে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদকেও কি দায়মুক্তি দেওয়া হবে?
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, অনেক এমপি-মন্ত্রী ও ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম, দুর্নীতি, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগ জমা পড়ার পর দুদকের অনুসন্ধান শেষে কারও বিরুদ্ধে মামলা হয়, কারও দায়মুক্তি দেওয়া হয়।আলোচিত ব্যক্তিদের দায়মুক্তি হলে গণমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয় দুদককে। এ কারণে বেনজীর ইস্যুতে সচেতন তারা। নতুন করে কোনও সমালোচনার সুযোগ দিতে চান না তারা।
prothomasha.com
Copy Right 2023