শ্রেণিকক্ষে ঢুকে ছাত্রীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় এক মাদ্রাসার শিক্ষক, অফিস সহকারীসহ দুজনের ওপর হামলা চালিয়েছেন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এর মধ্যে অফিস সহকারী মো. হাসানকে (৩৪) পিটিয়ে তাঁর দুই হাত ভেঙে দেওয়া হয়েছে। গত রোববার বিকেলে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের মদিনা বাজারের পূর্ব পাশে এবং দুপুরের দিকে মুছাপুর জামেয়া শরাফতিয়া ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় ওই হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় গুরুতর আহত অফিস সহকারী মো. হাসানকে জেলা শহর মাইজদীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অফিস সহকারী মো. হাসান বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য দুই বখাটে মো. রাজু (২৪) ও আবু নোমান (২৫) আমাদের মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীকে শ্রেণিকক্ষে ঢুকে উত্ত্যক্ত করছিলেন। তখন নূরানি বিভাগের শিক্ষক মো. সোহেল (২৬) বিষয়টি দেখে তাঁদের ধরে অধ্যক্ষের কাছে সোপর্দ করতে চাইলে তাঁরা তাঁর (সোহেল) ওপর হামলা চালান। তখন তিনি এগিয়ে গিয়ে ওই দুই কিশোর গ্যাং সদস্যকে আটক করে অধ্যক্ষের কাছে নিয়ে যান। পরবর্তী সময়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও দুই কিশোর গ্যাং সদস্যের অভিভাবকদের ঢেকে আনা হয়। এরপর দুই কিশোর গ্যাং সদস্যের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
অফিস সহকারী হাসান জানান, মীমাংসা হওয়ার পর সবাই যাঁর যাঁর মতো বাড়ি চলে যান। এরপর বিকেল পাঁচটার দিকে তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে মুছাপুর বাংলাবাজারে আসার পথে মদিনা বাজারের পূর্ব পাশে সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে তাঁর ওপর হামলা চালান কিশোর গ্যাংয়ের দুই সদস্য মো. রাজু (২৪), আবু নোমানসহ (২৫) তাঁদের সাঙ্গপাঙ্গরা। হামলাকারীরা তখন কাঠ ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে তাঁকে মারাত্মকভাবে আহত করেছেন। হামলায় তাঁর দুটো হাত ভেঙে গেছে।
জামেয়া শরাফতিয়া ইসলামিয়া ফাযিল মাদ্রাসার আরবি প্রভাষক মো. শহীদ উল্যাহ বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা দুই দফায় অফিস সহকারী হাসানের ওপর হামলা চালিয়েছেন। তিনি প্রথমে নুরানি বিভাগের শিক্ষক মো. সোহেলের ওপর হামলা ঠেকাতে গিয়ে তিনি হামলার শিকার হন। এরপর মুচলেকা নিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের ছেড়ে দেওয়ার পর বিকেলে বাড়ি থেকে বের হলে দ্বিতীয় দফায় হামলার শিকার হন। দ্বিতীয় দফার হামলায় হাসানের দুটো হাত ভেঙে দেন বখাটেরা। হামলার শিকার হাসানের শ্বশুর মো. সাহাব উদ্দিন বলেন, রোববার কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য দুই বখাটে মাদ্রাসায় ঢুকে এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করেন। তাঁর জামাতা হাসান বিষয়টির প্রতিবাদ করেন এবং কিশোর গ্যাং সদস্যদের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে তাঁদের ছেড়ে দেন। এ ঘটনায় কিশোর গ্যাংয়ের ওই দুই সদস্য ক্ষিপ্ত হয়ে বিকেলে অতর্কিতে তাঁর ওপর হামলা করেন। তাঁরা এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। হাসানের হাতে অস্ত্রোপচারকারী অর্থোপেডিক চিকিৎসক আবদুর রহমান বলেন, আহত হাসানের বাঁ হাতের কুনুই ভেঙে গেছে। সেটিতে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এ ছাড়া ডান হাতের কবজিতে একটি জোড়া প্লাস্টার করা হয়েছে।
মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবদুল্লাহ আল-মাহমুদ বলেন, ছাত্রীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় শিক্ষক এবং অফিস সহকারীর ওপর হামলার ঘটনা আজ মঙ্গলবার তিনি লিখিতভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করেছেন। এ ছাড়া হামলার শিকার অফিস সহকারীর পরিবারের পক্ষ থেকেও মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। অধ্যক্ষ জানান, রাজু, নোমানসহ এলাকার বেশ কিছু বখাটে ও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য রয়েছেন। তাঁরা প্রতিনিয়ত মাদ্রাসায় আসা–যাওয়ার পথে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করেন। অভিভাবকদের বলেও কোনো লাভ হয় না। কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রণব চৌধুরী বলেন, মাদ্রাসার শিক্ষক ও অফিস সহকারীর ওপর কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের হামলার ঘটনা তিনি শুনেছেন। অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। তবে ঘটনার বিষয়ে থানায় আজ পর্যন্ত কোনো অভিযোগ করা হয়নি।
prothomasha.com
Copy Right 2023