ছাত্রলীগকে গণধোলাই দিয়ে থানায় সোপর্দের আহ্বান জানিয়েছেন চট্টগ্রামের দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি আহসান হাবিব খান। রোববার সন্ধ্যায় উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নে স্থানীয় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদল নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেছেন। ওসির এমন রাজনৈতিক বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা শুরু হয়। এটিকে অপেশাদার আচরণ বলছেন পুলিশের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা।
ভিডিওতে ওসিকে বলতে দেখা যায়, ‘বিশেষ করে একটি কথা বলতে চাই, যারা ৫ আগস্টের আগে বিভিন্ন মানুষের বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে, মারপিট করেছে তাদের দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ার মধ্যে গণধোলাই দিয়া থানায় নিয়া আসবেন। বিশেষ করে ছাত্রলীগ ঠাঁই পাবে না। আপনাদের এই পর্যায়ে যদি আওয়ামী লীগ থাকতো আপনাদের ঠ্যাং-ঠোং (হাত-পা) ল্যাংরা হয়ে যেত।’
বক্তব্যের শুরুতে যুদ্ধাপরাধে ফাঁসি হওয়া সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বক্তব্য শুরু করেন। বক্তব্যের শুরুতে ওসি বলেন, ‘রাঙ্গুনিয়ার বীর সন্তান শহিদ সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে আমি আমার বক্তব্য শুরু করছি।’
তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মূল মাস্টারমাইন্ড আমাদের আদর্শ তারেক রহমান। তার নির্দেশে ঢাকাকে ছয়টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। এই ছয় সেক্টরের লোকজনই নতুন করে স্বাধীন করেছে।’
বক্তব্যের একপর্যায়ে ওসি বলেন, ‘আমার কথা হলো, বিএনপি বৃহত্তর একটি দল। দল-মত-গ্রুপ থাকতেই পারে। দল যাকে নির্বাচনের জন্য প্রতীক বরাদ্দ দেবে তার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আপনারা সবাই কাজ করবেন। আরেকটি কথা, বিএনপি ১৬ বছর সরকারের বাইরে ছিল। চুরি, ছিনতাই, ধর্ষণ এগুলো ছিল না।’
আওয়ামী লীগের আমলে ধর্ষণে বিশ্বে নজির তৈরি হয়েছে দাবি করে ওসি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সময়ে ধর্ষণ হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণ হয়েছে। বিশ্বের নজির ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে হয়েছে। যারা সাধারণ মানুষকে ১৬ বছর ঘরছাড়া করেছিল, নির্যাতন করছিল।’
বিএনপি নেতাকর্মীদের মামলা করতে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়ে ওসি বলেন, ‘আমার এক ভাই বলেছে, মামলা নিচ্ছে না পুলিশ। আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমি একটা সঠিক পরামর্শ দেব। প্রয়োজনে কোর্টে আলাপ করব মামলাটি কীভাবে এস্টাবলিশড করা যায়। তার জন্য আমি চেষ্টা করব।’
‘খাঁটি’ বিএনপি নেতাকর্মীদের তালিকা চেয়ে ওসি আহসান হাবিব বলেন, ‘আমাদের কিছু বিএনপির লোক আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিশে গেছে। অরজিনাল ওয়ার্ডভিত্তিক একটা লিস্ট আমি চাই। অপরাধ ঘটলে সবকিছু থানার ওসির পক্ষে সম্ভব না। কিছু দায়িত্ব আপনাদেরও নিতে হবে। যে লোকটা সৎ ও যোগ্য তাকে দিলে সুনাম হবে, বিএনপির সুনাম হবে। সেটা করতে হবে। চাঁদাবাজি করা যাবে না।’
এ বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি আহসান হাবিব খান বলেন, ‘অনিচ্ছাকৃত ভুল হয়ে গেছে। আমি বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। বিষয়টি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।’
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত সুপার (ডিবি) মো. রাসেল বলেন, ‘এমন বক্তব্য যদি দিয়ে থাকে তাহলে তিনি অপেশাদার আচরণ করেছেন। এ বিষয়ে যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
prothomasha.com
Copy Right 2023