ছাগলকাণ্ডে এখন উত্তাল দেশ। কোরবানি ঈদের আগ থেকে এখন পর্যন্ত আলোচনার শীর্ষে ১৫ লাখ টাকার একটি ছাগল! যা নিয়ে প্রতিনিয়ত চমকপ্রদ তথ্য সামনে আসছে। এবার ছাগলকাণ্ডের মাঝেই মাত্র ১৬ টাকার ছাগলের গল্প শোনালেন অভিনেতা ফারুক আহমেদ।জানান, শৈশবে তিনিও কিনেছিলেন ১৬ টাকা দিয়ে একটি ছাগল। যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে আবেগঘন স্মৃতি।
এক সাক্ষাৎকারে সেকথা স্মরণ করে এই অভিনেতা জানান, একবার মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকায় ফিরছেন তিনি। এমন সময় তার চোখ যায় একটি কালো ছাগলের বাচ্চার দিকে। ছাগলটি খুব পছন্দ হয় ফারুকের। কেউ একজন ছাগলটিকে বিক্রি করতে যাচ্ছিলেন। এ কথা শুনে ফারুক বায়না ধরলেন ছাগলটি কিনবেন। তবে তার মা-বাবা কেউই রাজি নন। কারণ, এটিকে তাদের সঙ্গে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া ও লালন-পালন করা কঠিন। নাছোড়বান্দা ফারুক আহমেদ; ছাগলটি তার চাই-ই।
ফারুক আহমেদ বলেন, ‘তখন আমি আমার ফুফুকে অনুরোধ করি ছাগলটি দেখে রাখতে। তিনি রাজি হন। ছাগলটির দাম চেয়েছিল ২০ টাকা। পরে দর-কষাকষি করে ১৬ টাকায় ঠিক হয়। কিন্তু টাকা পাব কোথায়? মাকে বললাম। মা বললেন, “এত টাকা আমি পাব কোথায়? তোর বাবাকে বল।” আমি আব্বার কাছে গিয়ে ১৬ টাকা চাইলাম। আব্বা বললেন, “বাবা আমি স্কুলশিক্ষক। ১৬ টাকা দিয়ে ছাগল কেনার সামর্থ্য আমার নাই।” আব্বাকে বললাম, আব্বা আমার কাছে ৫ টাকা আছে, আপনি ১১ টাকা আমাকে দেন। আব্বা সন্তানের মনরক্ষার জন্য আমাকে পকেট থেকে ১১ টাকা বের করে দিলেন। ছাগল কেনা হলো।’
কেনার তিন মাস পর সেই ছাগলটি মারা যায়। সেই স্মৃতি স্মরণ করে অভিনেতা বলেন, ‘ঢাকা থেকে গ্রামে গিয়ে মনটা খারাপ হয়ে যায়। ফুফু জানান, আমার ছাগলটা নাকি তিন মাস পরই মারা গেছে। শুনে সঙ্গে সঙ্গে আমার কান্না চলে আসে। আমি কাঁদছি। আব্বা আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছেন, “কেঁদো না থাক বাবা, তোমাকে এবার আরও সুন্দর একটা ছাগল কিনে দিব।” আমি আব্বার চোখের দিকে তাকালাম। দেখলাম, তার চোখও ভেজা। বাবাও কাঁদছেন। দুচোখ থেকে গড়িয়ে পানি ঝরছে।’
বাবার সেই কান্নার অর্থ তখন বোঝার বয়স হয়নি ফারুক আহমেদের। শুধুই এটাই বুঝেছিলেন যে, আর কখনোই হয়তো ছাগল কেনার সামর্থ্য হবে না তার। ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আব্বা আমাকে খুশি করার জন্য মাত্র ১৬ টাকা দিয়ে আরেকটি ছাগলের বাচ্চা কিনে দিতে পারেননি। আমার তাতে কোনো দুঃখ নেই। বরং আমার গর্বে বুক ভরে যায়, আমার আব্বা সৎ জীবনযাপন করেছেন বলে। অন্যের অর্থ আত্মসাৎ করে সন্তানকে ছাগল কেনার ১৬ টাকা দেননি। আমাদের বাস্তবতা শিখিয়েছেন।’
উল্লেখ্য, কোরবানির ঈদের আগে ১৫ লাখ টাকায় একটি ছাগল কিনে আলোচনায় আসেন এনবিআর কর্মকর্তা মতিউরের দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত। সেই ছাগলের সূত্র ধরেই আলোচনায় আসেন সরকারি কর্মকর্তা মতিউর। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় তার অঢেল সম্পদের তথ্য। সরকারি চাকরি করে মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যরা কীভাবে বিপুল বিত্ত বৈভবের হলেন তা নিয়ে প্রশ্নের অন্ত নেই।
prothomasha.com
Copy Right 2023