বিশ্বজুড়ে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে আজ মঙ্গলবার।ইতোমধ্যে আগাম ভোট দিয়েছেন ৭ কোটি ৭০ লাখের বেশি ভোটার। মঙ্গলবার ভোটগ্রহণ হলেও ফলাফল কবে জানা যাবে, তা নিয়ে কৌতূহল রয়েছে অনেকের মাঝে।
নির্বাচনের ফলাফল কখন জানা যাবে?
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল পেতে কয়েকদিন পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। এর কারণ হলো, অঙ্গরাজ্যগুলোর স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়। এরপর ভোট গণনা শুরু হয়। কিন্তু যখন কোন কোন অঙ্গরাজ্যে ভোটগণনা শুরু হয়, তখন আলাস্কা বা হাওয়াইয়ের মতো কোন কোন অঙ্গরাজ্যে ভোট গণনা চলতে থাকে। এ কারণে কোনো কোনো নির্বাচনে দ্রুত ফলাফল সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়, আবার কখনো কখনো সময় লাগে।
যেমন- ২০১৬ সালের ভোটের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প নিউইয়র্কে তার বিজয়ীর ভাষণ দিয়েছিলেন ভোররাত তিনটের দিকে, উল্লসিত সমর্থকদের সামনে একটি মঞ্চে দাঁড়িয়ে।
তবে ২০২০ সালের নির্বাচনে অবশ্য জো বাইডেনকে বিজয়ী ঘোষণা করতে কয়েক দিন সময় লেগে গিয়েছিল। সব ভোট গণনা করতে সময় লাগায় চূড়ান্ত বিজয়ীর নাম প্রকাশে বিলম্ব হয়েছিল বলে তখন জানিয়েছিল প্রশাসন। তবে পরদিন নাগাদ বিজয়ী প্রার্থীর সম্পর্কে একটি ধারণা পরিষ্কার হতে শুরু করে।
কারণ, অঙ্গরাজ্যগুলোয় ভোটের হিসাবে ইলেক্টোরাল কলেজের একটি হিসাব পরিষ্কার হয়ে যায়। কিন্তু সুইং স্টেট হিসেবে পরিচিত কোনো রাজ্যে যদি ভোট গণনা বা আইনি ঝামেলা তৈরি হয়, তাহলে বিজয়ী প্রার্থী সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেতে আরও সময় লাগতে পারে।
২০০০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী জর্জ বুশ ও ডেমোক্র্যাট অ্যাল গোরের মধ্যে এত তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল যে তা শেষ পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছিল ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের ভোট গণনায়। দুই প্রার্থীর মধ্যে মাত্র কয়েকশ” ভোটের ফারাক ছিল। এ নিয়ে শুরু হয় কয়েক সপ্তাহব্যাপী আইনি যুদ্ধ, যার পরিণামে ভোট পুনর্গণনা করতে হয়। শেষ পর্যন্ত ব্যাপারটা সুপ্রিম কোর্টে গড়ায়।
অবশেষে বুশকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়, ফলে তিনি ফ্লোরিডা রাজ্যের ২৫টি ইলেকটোরাল ভোটের সবগুলো পেয়ে যান। তাতে তার মোট ইলেকটোরাল ভোট দাঁড়ায় ২৭১ এবং বিজয় নিশ্চিত হয়। আর গোর পপুলার ভোট বেশি পেলেও পরাজয় স্বীকার করে নেন। সব মিলিয়ে কয়েক সপ্তাহ সময় লেগে যায়।
সাধারণ রীতি অনুযায়ী, আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি, যখন বিভিন্ন রাজ্যের ইলেকটোররা বসে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট পদে ভোট দেবেন। এরপর ভোটের ফল ওয়াশিংটন ডিসিতে পাঠানো হবে এবং জানুয়ারির শুরুতে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাইস প্রেসিডেন্ট আনুষ্ঠানিকভাবে গণনা করবেন।
ইলেক্টোরাল ভোটে ‘টাই’ হলে কী হবে?
ইলেক্টোরাল ভোটে যদি কোনো প্রার্থী এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পান, সে ক্ষেত্রে মার্কিন আইন সভার নিম্ন-কক্ষ ‘হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভস’ ভোট দিয়ে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবেন।
এ ক্ষেত্রে প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যরা শীর্ষ তিন প্রার্থীর ভেতর থেকে একজনকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাছাই করে থাকেন। বাকি দুজন প্রার্থীর ভেতর থেকে একজনকে ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নেয় দেশটির সিনেট। যদিও এ রকম ঘটনা মার্কিন ইতিহাসে একবারই ঘটেছে। ১৮২৪ সালে এভাবেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জন কুইনসি অ্যাডামস।
তবে বর্তমানে অবশ্য রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটিক পার্টি দুটির যে আধিপত্য রয়েছে, তাতে ওই রকম ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।
বিজয়ী প্রার্থীর নাম ঘোষণার পর কী হয়?
নির্বাচনের পরপরই নতুন সরকার গঠন করা হয় না। বিজয়ীদেরকে কিছুদিন সময় দেওয়া হয়, যাকে ‘রূপান্তরকালীন সময়’ বলা হয়ে থাকে। ওই সময়ের মধ্যে নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের বাছাই করেন এবং পরিকল্পনা তৈরি করে থাকেন। এরপর নতুন বছরের শুরুতে অর্থ্যাৎ জানুয়ারিতে নতুন বা পুননির্বাচিত প্রেসিডেন্টের অভিষেক ও শপথ অনুষ্ঠান হয়।
রীতি অনুযায়ী, ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
১৯৩৩ সালে হওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ২০তম সংশোধনীতে নির্ধারণ করে দেওয়া হয় যে, প্রেসিডেন্টের ওই অভিষেক অনুষ্ঠান হবে ২০ জানুয়ারি। রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনের সামনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে নতুন প্রেসিডেন্টে অভিষেক হয়। এ অনুষ্ঠানের পরই নতুন প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউসে যান তার চার বছরব্যাপী মেয়াদ শুরু করার জন্য।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী, একই ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করতে পারেন।
তবে ১৯৫১ সালের আগ পর্যন্ত অবশ্য দেশটিতে দুইবারের বেশি প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু ওই বছর যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ২২তম সংশোধনের মাধ্যমে একই ব্যক্তির দুইবারের বেশি প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সূত্র: বিবিসি বাংলা।
prothomasha.com
Copy Right 2023