ডলার-সংকট ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কড়াকড়ির কারণে দেশে মূলধনি যন্ত্রপাতিসহ সার্বিকভাবে আমদানি কমে গেছে। ব্যাংকগুলো এখন আমদানি ঋণপত্র খোলার বিষয়ে বেশ সাবধানী। অন্যদিকে রপ্তানি আয়ে গত মাসেও প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এতে সার্বিকভাবে বাণিজ্য ঘাটতি কমে গেছে।বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ গত ডিসেম্বরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত ছিল ১৯২ কোটি মার্কিন ডলার। এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে প্রবাসী আয়ও। পাঁচ মাস ধরে প্রবাসী আয় ২০০ কোটি ডলারের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে। চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকলেও বড় ঘাটতি রয়েছে আর্থিক হিসাবে। ডিসেম্বর শেষে আর্থিক হিসাবে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৫৩৯ কোটি ডলার। যদিও ২০২২ সালের ডিসেম্বরে আর্থিক হিসাবে ১৪ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত ছিল।
খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিদেশি ঋণ ছাড় কমে যাওয়া, সরকারের বিদেশি ঋণ পরিশোধ বেড়ে যাওয়া এবং কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ না হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে আর্থিক হিসাবে বড় ঘাটতি রয়ে গেছে। আবার যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হচ্ছে, তা সময়মতো দেশে আসছে না। রপ্তানি আয় সময়মতো দেশে না আসাকেও আর্থিক হিসাবের ঘাটতির বড় একটি কারণ মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এমন পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। প্রবাসী আয়ের অতিরিক্ত প্রণোদনা ও দামের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি তুলে নেওয়ার পর প্রবাসী আয় বেড়েছে। কিন্তু রপ্তানি আয়ে ডলারের আগের দাম অব্যাহত আছে। ভিন্নভাবে আসার কারণে ডলারের দাম ভিন্ন হবে, তা তো হতে পারে না। এ জন্য চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত হলেও আর্থিক হিসাবে বড় ঘাটতি রয়ে গেছে। যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানির জন্য জাহাজে উঠছে, তার পুরো অর্থ দেশে আসছে না। যেটুকু প্রয়োজন, শুধু তা–ই আনছেন রপ্তানিকারকেরা।’
জাহিদ হোসেন আরও বলেন, ‘সব ক্ষেত্রে ডলারের এক দাম ও প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দাম বাজারভিত্তিক করে দিলে আর্থিক হিসাবের ঘাটতি দূর হবে। আজ বা কাল এদিকে যেতেই হবে। তাই আগেভাগে যাওয়াই ভালো।’চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যের হিসাব অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সার্বিক আমদানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৯ দশমিক ৮০ শতাংশ কমে ৩০৫ কোটি ডলারে নেমেছে। একই সময়ে রপ্তানি শূন্য দশমিক ৬৪ শতাংশ বেড়ে ২৫৯ কোটি ডলার হয়েছে। এতে বাণিজ্য ঘাটতি কমে ৪৫৯ কোটি ডলারে নেমেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ১ হাজার ২৩১ কোটি ডলার।
আর্থিক হিসাবের অন্যতম উপাদান হলো বিদেশি বিনিয়োগ। জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে মোট সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে ১৮২ কোটি ৭০ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২৮ শতাংশ কম। এ সময়ে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে ৯৫ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি। ফলে গত জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে বাংলাদেশের আর্থিক হিসাবের ঘাটতি ৫৩৯ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা জুলাই-নভেম্বর সময়ে ছিল ৫৪৮ কোটি ডলার। এদিকে গত ডিসেম্বর শেষে সামগ্রিক লেনদেনের ভারসাম্যের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৬৭ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ ঘাটতি ছিল ৬৪৫ কোটি ডলার।
prothomasha.com
Copy Right 2023