ধুন্ধুমার আইটেম গানের ফাঁকে পিস্তলের ডগায় একটা লাশ পড়ে। লাশটা ছোট মির্জার (আবু হুরায়রা তানভীর); প্রভাবশালী রাজনৈতিক বড় মির্জার (শহীদুজ্জামান সেলিম) বখে যাওয়া পুত্র। খুনের খবর ডালপালা মেলার আগেই লাশটা গুম করতে হবে। লাগেজভর্তি লাশ নিয়ে লুকোছাপা করতে থাকেন ওমর (শরীফুল রাজ) ও বদি (নাসির উদ্দিন খান)। তারা কারা? খুনের আগে ওমর ও বদির পরিচয় ছিল না। দুর্ঘটনাক্রমে খুনোখুনির মধ্যে ঘটনাক্রমে পরিচয় ঘটেছে। বদি ছোট মির্জার ব্যক্তিগত সহকারী। ওমর কে? রহস্যময় চরিত্র ওমর ধীরে ধীরে নিজের চালচরিত্র মেলে ধরতে থাকে।
লাগেজটা লুকাতে ইতিউতি ঘোরাঘুরি করেও কোনো ফায়দা হয় না; কখনো কখনো আবার ফায়দা মেলেও। খুনের পেছনে কে, সেটা দর্শকের কাছে পরিষ্কার। তবে খুনটা কেন করা হয়েছে, সেই প্রশ্নই সিনেমাজুড়ে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে দর্শকদের। গল্পে খুব একটা প্যাঁচ নেই; অনেকটা ঝরঝরে। সাবলীল। বিরতির আগেই মোটামুটি গল্পের কাঠামোটা নির্মাণ করে ফেলেছেন নির্মাতা মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ। গল্পের মতো সিদ্দিক আহমেদের চিত্রনাট্যও মুচমুচে, গোছানো। আর দশটা থ্রিলার সিনেমার মতো গল্পের পরতে পরতে নিশ্বাস বন্ধ হওয়ার মতো টান টান উত্তেজনা নেই। তবে নির্মাতার গল্প বলার কায়দাটা বেশ উপভোগ্য, যথেষ্ট মুনশিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন পরিচালক। গড়পড়তা একটা থ্রিলার গল্পকেও উপাদেয় করে তুলেছেন রাজ।
সিনেমার প্রধান মসলা ছিল কমেডি। কমেডিই ছবিটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। সিনেমায় আড়াই ঘণ্টা হেসেখেলে উড়িয়ে দেওয়ার মতো রসদ রয়েছে। ফলে ছবিটি শেষ পর্যন্ত দর্শকদের ধরে রেখেছে। মাঝেমধ্যে অট্টহাসিতে সিনেমা হল ফেটে পড়েছে।সিনেমায় ধুন্ধুমার অ্যাকশন নেই; এমনকি কোনো নায়িকাও নেই। বাংলা চলচ্চিত্রের দর্শকেরা নায়িকাহীন সিনেমায় খুব একটা অভ্যস্ত নন। এটি চ্যালেঞ্জিংও বটে। চ্যালেঞ্জটা ঠিকঠাকভাবেই উতরাতে পেরেছেন নির্মাতা রাজ। ছবির নাম ভূমিকায় নিজের সেরাটা দিয়েছেন শরীফুল রাজ। কঠোরতা, চতুরতা কিংবা কমেডি দৃশ্যে অনবদ্য ছিলেন অভিনেতা রাজ। ক্যারিয়ারে কমেডিতে খুব কমই দেখা গেছে রাজকে। পর্দায় পাওয়া সময়টাকে সর্বোচ্চ কাজে লাগিয়েছেন তিনি ‘ওমর’ ছাড়াও ‘দেয়ালের দেশ’ ও ‘কাজলরেখা’ সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন; ভিন্ন ভিন্ন তিন চরিত্রে নিজেকে আরও এক ধাপ এগিয়ে রাখলেন রাজ। রাজের সঙ্গে নাসির উদ্দিন খানের অভিনয়ও নজর কেড়েছে।
শহীদুজ্জামান সেলিম, রোজী সিদ্দিকী, এরফান মৃধা শিবলুর মতো শিল্পীদের ভিড়ে কাজের মেয়ে ফুলি চরিত্রে আয়মন শিমলার অভিনয়ও মনে রাখার মতো। সিনেমার বদি, মতির মতো চরিত্রের নামকরণে হুমায়ূন আহমেদের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। প্রয়াত চিত্রনায়ক মান্নার কয়েকটি সংলাপও পাওয়া গেছে। ছবিটি হুমায়ূন আহমেদ ও মান্নাকে উৎসর্গ করা হয়েছে। বিশেষ করে ওমর ও বদির মুখে প্রচলিত কিছু গালি শুনতে মন্দ লাগেনি। ছবির দুটি গানই কানে আরাম দিয়েছে। আবহ সংগীতও মন্দ না। বিরতির আগে সিনেমার গল্পটা তরতরিয়ে এগিয়ে গেলেও বিরতির পর তাতে খানিকটা ভাটা পড়ে। ধীর হয়ে আসা গল্পে টান টান উত্তেজনা ছিল না।
এর মধ্যে সিনেমার ট্রেলারেই গল্পের অনেকটা উন্মোচন করা হয়েছে। ফলে পর্দায় দর্শকের চমকে যাওয়ার সুযোগ ছিল কম, কিছু দৃশ্য অনেকটা অনুমিত ছিল। ছবিতে আরও খানিকটা ক্লাইমেক্স জুড়তে পারলে আরও উপভোগ্য হতো; টান টান থ্রিলার সিনেমা দেখার স্বাদ মিলত। তারপরও মোটের ওপর ছবিটি যথেষ্ট উপভোগ্য। দেখে নিতে পারেন।
prothomasha.com
Copy Right 2023