প্রতি বছর ৮ মার্চ পালন করা হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস। বিশ্বে নারীদের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক অর্জনকে সম্মান জানাতে এই দিনটি ব্যাপকভাবে পালিত হয়। আন্তর্জাতিক নারী দিবস একটি বিশ্বব্যাপী ছুটির দিন হিসেবেও পালন করা হয়। দিনটি লিঙ্গ সমতা, প্রজননের অধিকার, নারীদের ওপর হিংসা, নির্যাতন ও নারীর সমান অধিকার ইত্যাদির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।বিশ্ব জুড়ে লিঙ্গবৈষম্য কমাতে, পুরুষ-নারী সমানাধিকারের জন্য পালন করা হয় দিনটি। এ বছরও তার ব্যতিক্রম নয়।
নারী দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘নারীর সমঅধিকার, সমসুযোগ, এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ।’ নারীর উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নানাবিধ উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাতে এই প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।এর তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে জাতিসংঘ বলছে, কোভিড মহামারী এবং সংঘাতের কারণে ২০২০ সাল থেকে আরও ৭৫ মিলিয়ন মানুষ গুরুতর দারিদ্র্যের মধ্যে পড়েছে।
২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের সীমারেখায় থাকা ৩৪২ মিলিয়নেরও বেশি নারীর ভাগ্য পরিবর্তন করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। তাই নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতাহীনতা মোকাবিলায় নজর দেওয়ার জন্যই এবারের নারী দিবসের থিম নির্বাচন করা হয়েছে।এ ছাড়া নারীদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধেও বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগ যথেষ্ট নয়। অথচ নারীদের জন্য সঠিক বিনিয়োগ উন্নত ভবিষ্যৎ গঠনের জন্য অপরিহার্য।
এ দিবসটি উদযাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মজুরিবৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা। সেই মিছিলে চলে সরকারি লেঠেল বাহিনীর দমন-পীড়ন।১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হয়েছিল। ক্লারা ছিলেন জার্মান রাজনীতিবিদ। জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির স্থপতিদের একজন।
এরপর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। এতে ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি যোগ দিয়েছিলেন। এ সম্মেলনে ক্লারা প্রতি বছর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। এরপর সিদ্ধান্ত হয় ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ থেকে নারীদের সম-অধিকার দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হবে। দিবসটি পালনে এগিয়ে আসে বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা।১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ পালন করা শুরু হল। অতঃপর ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। দিবসটি পালনের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আহ্বান জানায় জাতিসংঘ। এরপর থেকে পৃথিবী জুড়ে দিনটি পালিত হচ্ছে নারীর সমঅধিকার আদায়ের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে। বিশ্বের সকল দেশে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস।
বর্তমান বিশ্বে এখনও সমাজের বেশির ভাগ জায়গায় লিঙ্গবৈষম্য রয়েছে। পুরুষরা এখনও বহু ক্ষেত্রে বেশি মাত্রায় সুবিধা ভোগ করেন। আর সে কারণেই এই দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিল্প-সাহিত্য-সহ সব ধরনের ক্ষেত্রে এবং সমাজের সকল কাজে নারীদের অবদানকে স্বীকৃতি দিতেই এই দিনটি পালিত হয়।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস বিশ্বে নারীত্বের একটি মহান উদযাপন। এই দিনটি বিশেষ করে নারীদের কৃতিত্বকে সম্মান করে এবং লিঙ্গ বৈষম্য সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ায়। এ দিনে আমাদের সমাজে নারীদের কৃতিত্ব উদযাপন করার উপায়গুলো নিয়ে আমাদের সকলের চিন্তা করা উচিত। মেয়েদের শিক্ষার প্রসার ঘটানো এবং সমাজের সকল অংশ থেকে লিঙ্গ পক্ষপাত দূর করা গুরুত্বপূর্ণ।
prothomasha.com
Copy Right 2023