অন্য দাবিগুলোর মধ্যে আছে ঢাকার অতিথিশালা শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য অবমুক্ত করা; অধ্যাপক গ্রেড ১ ও ২-তে আবেদন করা শিক্ষকদের পদোন্নতির ব্যবস্থা করা; কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী বিভাগীয় প্রধান ও ডিন নিয়োগ এবং ইতিমধ্যে বেআইনিভাবে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের প্রত্যাহার করা; শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি স্থায়ীকরণে আইনবহির্ভূত শর্তারোপ করে জ্যেষ্ঠতা ক্ষুণ্নের বিষয়টি নিষ্পত্তি করা; ৯০তম সিন্ডিকেট সভায় বিতর্কিত শিক্ষাছুটি নীতিমালা প্রত্যাহার করে আগের নীতিমালা বহাল এবং ৮৬তম সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদিত স্থায়ীকরণ সিদ্ধান্ত বাতিল করা।
শিক্ষক সমিতির দাবি পূরণ না হওয়ায় গত মঙ্গলবার সাধারণ সভা করে শিক্ষক সমিতি। ওই সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয় ২৪ এপ্রিলের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে পরদিন থেকে উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ ও প্রক্টরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে। তবে ওই কর্মসূচি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা (প্রথম বর্ষ স্নাতক) অনুষ্ঠানের দিন শিথিল থাকবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ থেকে শিক্ষক সমিতির নেতারা সকালে প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ ও প্রক্টরের দপ্তরে তালা দেন। তাঁরা ওই তিনজনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ ঢাকায়। প্রক্টর ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ ভবনের নিজ বিভাগে আছেন। প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি বিভাগের দপ্তরে আছি। এখনো প্রক্টর অফিসে যাইনি।’ সহ-উপাচার্য মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, সাত দফা দাবি নিয়ে শিক্ষক সমিতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনো সিদ্ধান্ত না পেয়ে তালা দিয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আবু তাহের বলেন, ১৯ মার্চ থেকে শিক্ষকদের সাত দফা দাবি পূরণ না হওয়ায় ক্লাস বর্জন কর্মসূচি চলছে। তবে ২৮ এপ্রিল থেকে সশরীর ক্লাস নেবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। উপাচার্য দাবি পূরণ করার ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় তাঁরা তাঁকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন ও তাঁর দপ্তরে তালা দিয়েছেন। সঙ্গে কোষাধ্যক্ষ ও প্রক্টরের কক্ষেও তালা দেওয়া হয়েছে।
জরুরি সিন্ডিকেট সভা
শিক্ষক সমিতির সাত দফা দাবি নিয়ে গতকাল বুধবার রাতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরুরি সিন্ডিকেট সভা হয়। সভায় শিক্ষক সমিতির বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে আলোচনা হয়। এতে কয়েকটি দাবি নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়। আজ বেলা দুইটা পর্যন্ত সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষক সমিতিকে জানানো হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাত নয়টায় সিন্ডিকেটের সভাপতি ও উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈনের সভাপতিত্বে অনলাইনে এক জরুরি সিন্ডিকেট সভা হয়। সভায় গত ১৯ ফেব্রুয়ারি উপাচার্যের দপ্তরে শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনায় ডেপুটি রেজিস্ট্রার ও কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মামুনকে আহ্বায়ক করা হয়। কমিটির সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের অধ্যাপক রাহাত শাহরিয়ার ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) একজন সদস্য।
এ ছাড়া শিক্ষকদের অন্য দাবি নিয়ে শিক্ষক সমিতির সঙ্গে আলোচনা করবেন সিন্ডিকেট সদস্য ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সাদেকা হালিম। এ ছাড়া শিক্ষকদের আরও কিছু দাবি নিয়ে আগামী ১৫ মের মধ্যে আলোচনা হবে। সিন্ডিকেটের সদস্যসচিব ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. আমিরুল হক চৌধুরী বলেন, সিন্ডিকেটের সভা হয়েছে। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত লিখে উপাচার্যের কাছে পাঠানো হয়েছে।
সিন্ডিকেটের সদস্য ও সহ-উপাচার্য মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, সিন্ডিকেটে উপাচার্যের দপ্তরে হাঙ্গামায় এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি হয়। শিক্ষকদের অন্য দাবি নিয়ে সিন্ডিকেট সদস্য সাদেকা হালিম শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আবু তাহের বলেন, ‘সিন্ডিকেটে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা আমরা জানি না। আমরা শিক্ষকদের ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবি নিয়ে কর্মসূচি পালন করছি। দাবি পূরণ হলে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেব।’
আরেক হাউস টিউটরের পদত্যাগ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে সৃষ্ট অচলাবস্থা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ তুলে এবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের হাউস টিউটরের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মু. আলী মুর্শেদ কাজেম। বৃহস্পতিবার সকালে মু. আলী মুর্শেদ কাজেম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। এ নিয়ে পাঁচটি হলের ছয়জন হাউস টিউটর পদত্যাগ করেছেন।
পদত্যাগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিভিন্ন অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে সৃষ্ট অচলাবস্থা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া, পদোন্নতিতে অযাচিত শর্তারোপ, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে সাধারণ শিক্ষকদের উত্থাপিত সব ন্যায্য দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করে বর্তমানে ওই পদে দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করছি।’ ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. আমিরুল হক চৌধুরী বলেন, ‘পদত্যাগপত্র পেয়ে নথিভুক্ত করেছি।’