কুমিল্লায় একটি মাদ্রাসার শৌচাগার থেকে এক শিশুছাত্রের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার রাতে নগরের দক্ষিণ চর্থা এলাকার মারকাজুন নুর ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসা না থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ঘটনাটিকে আত্মহত্যা দাবি করলেও তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টি খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছে পরিবার।
ওই শিশুর নাম তাওহীদ হোসেন (১২)। সে মাদ্রাসাটির হিফজ বিভাগের শিক্ষার্থী ও চৌদ্দগ্রাম পৌর এলাকার রামরায় গ্রামের বাসিন্দা খোরশেদ আলমের ছেলে। একমাত্র ছেলের মৃত্যুতে পরিবারটি এখন দিশাহারা। শিশুটির বাবা খোরশেদ আলম বলেন, ‘ছেলেটা কেন এভাবে আত্মহত্যা করবে—তা আমার মাথায় আসে না। আমি ঘটনাটি ভালোভাবে তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’
পুলিশ ও স্থানীয় কয়েক বাসিন্দা জানায়, নগরের দক্ষিণ চর্থা এলাকায় ছয়তলার একটি শৌচাগারের ভেতর ভেন্টিলেটরের সঙ্গে তাওহীদের ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পায় অন্য ছাত্ররা। পরে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হলে তাঁরা পুলিশকে খবর পাঠায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছার পর রাত ৯টার দিকে মরদেহটি উদ্ধার করে। খবরটি চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় বাসিন্দারা মাদ্রাসাটি ঘেরাও করে ভাঙচুরের চেষ্টা চালান। পরে পুলিশ সদস্যেরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবি, সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির সময় শিশুটির শরীরের কোমর, পিঠ, হাতসহ বিভিন্ন স্থানে থেঁতলানোর কালো চিহ্ন দেখা গেছে। এর আগেও ওই মাদ্রাসায় একাধিক আবাসিক শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে মারধরসহ নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। কোনো কারণ ছাড়াই শিশুটির এমন মৃত্যু হতে পারে না। তাঁরা বিষয়টি সুষ্ঠুভাবে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মারকাজুন নুর ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসার পরিচালক নজির আহমেদ আজ বৃহস্পতিবার বলেন, ‘আমরা ঘটনাটি জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানিয়েছি। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে সিসিটিভি ফুটেজ ঘেঁটে দেখা গেছে, বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে তাওহীদ হোসেন কাপড় শুকানোর একটি রশি নিয়ে টয়লেটের দিকে গেছে। খেলাধুলা শেষে অন্য ছাত্ররা সন্ধ্যার পর রুমে ফিরে টয়লেটে গেলেই বিষয়টি জানতে পারে।’
তাওহীদের শরীরে কালশিটের প্রসঙ্গে মাদ্রাসার পরিচালক আরও বলেন, ‘আমরা পুরো সিসিটিভি ফুটেজ পুলিশকে দিয়েছি। তাঁরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখুক। আমাদের এখানে কোনো শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করা হয় না। তাওহীদ অনেক ফরসা ছেলে; দীর্ঘক্ষণ ঝুলন্ত অবস্থায় থাকায় রক্ত জমাট বেঁধে ওই কালো চিহ্নগুলো দেখা গেছে।’
মাদ্রাসার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে বলে জানান কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় তাওহিদের বাবা থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছেন। আমরা ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছি। তবে প্রাথমিকভাবে মরদেহের শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাইনি। এরপরও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। এর আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
prothomasha.com
Copy Right 2023