কিডনি আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশনের ক্ষেত্রে কিডনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়া শরীরের পানি ও লবণের ভারসাম্য রক্ষার্থে কিডনি বিভিন্নভাবে কাজ করে। মানুষের শরীরে সাধারণত দুটি কিডনি থাকে। অনেকের জন্মগতভাবে একটি কিডনি থাকে, আবার কারও কারও কিডনির কোনো রোগের কারণে কিডনি অপারেশন করে অপসারণ করতে হয়। যে কারণেই হোক, কারও যদি কিডনি একটি থাকে; সেটি দিয়ে দুটির কাজ সম্ভব কি না, এটা অনেকের প্রশ্ন। আবার প্রয়োজন অনুযায়ী অনেকের কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হয়, সেটাইবা কখন আবশ্যক হয়ে পড়ে, তা-ও জানা প্রয়োজন।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কিডনি দুটির জায়গায় একটি থাকার কারণ হচ্ছে জন্মগতভাবে কিডনি না থাকা। মেডিকেলের ভাষায় এটাকে ‘কিডনি এজেনেসিস’ বা ‘রেনাল এজেনেসিস’ বলে। এ ছাড়া কিছু কারণে কিডনি অপারেশন করে অপসারণ করতে হয়, যেমন কিডনিতে টিউমার হলে, কিংবা কিডনিতে পুঁজ জমে বা মারাত্মক জীবাণু সংক্রমণ হয়ে কিডনি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেটি ফেলে দিতে হয়। মারাত্মক শারীরিক আঘাতে বা কিডনিতে পাথর জমে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হলে সে ক্ষেত্রেও আক্রান্ত কিডনি অপসারণ করতে হয়। এসব ক্ষেত্রে রোগীকে একটি কিডনি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হয়। আবার প্রয়োজনে অনেকে কিডনি ডোনেট বা দান করেন, তাঁরাও একটি কিডনি নিয়ে বেঁচে থাকেন।
এখন পর্যন্ত যতটুকু গবেষণা হয়েছে সে অনুযায়ী দেখা গেছে, শরীরের বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশনসহ অন্যান্য শারীরিক প্রক্রিয়া একটি কিডনির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সে বিবেচনায় একটি কিডনি যথেষ্ট বলা যায়। এমনকি যাঁদের জন্মগতভাবে কিডনি অনুপস্থিত থাকে, কোনো সমস্যা হয় না বলে অনেকে বহু বছর বুঝতেও পারেন না। তবে মনে রাখতে হবে, দুটি কিডনির কাজ একটিকে করতে হয় বলে তুলনামূলক চাপ বেশি পড়ে সুস্থ কিডনির ওপর। সেটি থেকে শরীরে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। তবে সবার যে হবে, এ রকম কোনো কথা নেই। তারপরও কারও যদি এ রকম একটি কিডনি থাকে, তাকে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে। কিডনি-সংক্রান্ত কিছু পরীক্ষা করে বর্তমানে কিডনির সুস্থতার মাত্রা পরিমাপ করা যায়।
কোন কারণে শরীরে কিডনি একটি, সেটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোনো কিডনির রোগ যদি চলমান থাকে, যার কারণে প্রথম কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর অন্যটিও একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে কিডনি প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়ে। আবার একটিমাত্র কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়তে পড়তে তাতে কিডনির কোনো রোগ হলে বা ক্ষতিকর প্রভাব পড়লে তখনো কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হয়। একজন চিকিৎসক রোগীর সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেন। কিডনি প্রতিস্থাপন একটি বড় ধরনের অপারেশন। এটি করতে ও প্রতিস্থাপন টেকসই রাখতে শারীরিক কোনো ঝুঁকি আছে কি না, তা অবশ্যই বিবেচ্য।কিডনির সমস্যা অনেকাংশে প্রকাশিত হয় না, কিন্তু ভেতরে-ভেতরে নীরব ঘাতকের ভূমিকা পালন করতে থাকে। দুটির জায়গায় একটি সুস্থ কিডনি থাকলে সেটি শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে সক্ষম হলেও, ওই কিডনির সুস্থতা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একজন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকা উচিত।
prothomasha.com
Copy Right 2023