ফরিদপুরৈ ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন করে এক বিধবা নারীর জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে দুই আওয়ামী লীগ নেতা ও একজন স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত নেতারা হলেন- অম্বিকাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রবিউল মোল্লা, আওয়ামী লীগ নেতা তুহিন মিয়া ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা ইয়াকুব শেখ। আর ভুক্তভোগী নারী হলেন সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের পশ্চিম রামকান্তপুর গ্রামের কহিনুর বেগম।
শুক্রবার সকালে ১৪৪ ধারা জারিকৃত ওই জায়গায় পাকা স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু করে অভিযুক্তরা। খবর পেয়ে কোতোয়ালী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়।
স্থানীয়রা জানান, ওই তিন প্রভাবশালী দীর্ঘদিন সদরে অম্বিকাপুর ইউনিয়নে রিয়েল এস্টেট ব্যবসার নামে নিরীহ মানুষদের ওপর নানা কৌশলে অত্যাচার করে আসছে। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধ জমি দখলেরও অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের পশ্চিম রামকান্তপুর গ্রামের বাসিন্দা বিধবা নারী কহিনুর বেগমের পৈত্রিক সম্পত্তি কিছুদিন আগে জোরপূর্বক দখল করার চেষ্টা করে স্থানীয় প্রভাবশালী রবিউল মোল্যা, তুহিন মিয়া, ইয়াকুব শেখসহ তাদের লোকজন। পরে কহিনুর বেগম আদালতের শরণাপন্ন হলে আদালত ওই জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি করেন। শুক্রবার সকালে ওই জায়গায় ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন করে পাকা ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেন তারা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়।
বিধবা নারী কহিনুর বেগম অভিযোগ করে বলেন, আমাদের পারিবারিক ৫০ শতাংশ জমি নিয়ে আমার চাচার সঙ্গে দীর্ঘ দিন চলে আসছিল। সেই জমি ওই জমি পারিবারিকভাবে ভাগ-বাটোয়ারার কিছু হয়নি এখনো। যা নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। কিন্তু ওই তিন ভূমিদস্যু জোর করে আমাদের জমি দখল করার পায়তারা করছে। তারা এখানে তৃতীয় পক্ষ হয়ে আমাদের পরিবারে ঢুকে দ্বন্দ্ব বড় করে তুলছে। শুধু আমাদের পরিবার না তাদের দ্বারা এই এলাকার বহু মানুষ নির্যাতনের শিকার। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে না। আমি জমির কাছে গেলেই আমাকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়। কিছুদিন আগে আমার বৃদ্ধ মাকে তারা মারপিট করে।
কহিনুর বেগম বলেন, আমার স্বামী মারা গেছে দীর্ঘদিন আগে। আমার কোনো ছেলে সন্তান নেই। দুইটি মেয়ে রয়েছে। বাবা ও ভাই কেউই বেঁচে নেই। আমার বাড়িতে কোনো পুরুষ মানুষ নেই, আমি অসহায়। এ কারণেই তারা জোরপূর্বক আমার জমি দখলের চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
ক্রয়কৃত জায়গায় ঘর নির্মাণ করছেন দাবি করে ইয়াকুব শেখ বলেন, কহিনুর বেগমের চাচার সম্পত্তি আমরা কিনে নিয়েছি। সেখানেই আমি ঘর নির্মাণ করছি। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে কেন নির্মাণ কাজ করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৪৪ ধারা জারি করেছিল সঠিক। আদালত সেটি খারিজ করে দিয়েছে। পুনরায় তারা আপিল করেছে, আমাকে হয়রানি করার জন্য।
অম্বিকাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল আলম বলেন, এই জমি নিয়ে এক বছর আগে আমি সালিশ করেছিলাম, কিন্তু তাতে কোনো সমাধান হয়নি। পরে বিষয়টি আদালতে গড়ায়। আজকের ঘটনা শুনেছি, আমি এলাকার বাইরে থাকায় ঘটনাস্থলে যেতে পারিনি।
ফরিদপুর কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসাদউজ্জামান বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে দুই পক্ষকে ডেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
prothomasha.com
Copy Right 2023