‘গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার’ আন্দোলনে বিএনপির ব্যর্থতার রেশ পড়েছে মিত্র দল ও জোটগুলোতেও। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে মিত্র দলগুলোর অনেকে ব্যস্ত বিগত আন্দোলন-কর্মসূচির দুর্বলতার পর্যালোচনায়। পাশাপাশি আবার কীভাবে আন্দোলন ‘পুনর্গঠন’ করা যায়, তার পথ-কৌশল খুঁজছেন মিত্র দল ও জোটের নীতিনির্ধারণী নেতারা। বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা একাধিক দল ও জোটের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা মনে করছেন, নানা বাস্তবতায় আগামী এপ্রিল বা মে মাস পর্যন্ত রাজপথে বড় কর্মসূচির সম্ভাবনা কম। এ ক্ষেত্রে এসএসসি পরীক্ষা, রোজা ও ঈদ ছাড়াও বিএনপির নেতা-কর্মীদের কারাবন্দিত্ব বা অনুপস্থিতি বড় বাধা।
বিএনপির অভিযোগ, এখনো তাদের প্রায় ১৫ হাজার নেতা-কর্মী জেলে। তাঁদের মুক্ত করার আগে বড় কর্মসূচিতে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে মিত্র দলগুলোর নেতারা মনে করছেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাড়ে তিন মাস পর গত বৃহস্পতিবার কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। এখন আন্দোলনের দুর্বল দিকগুলো নিয়ে বিএনপির ভেতরে-বাইরে পর্যালোচনা হবে। এরপর আন্দোলন-কর্মসূচির বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তার আগে সিদ্ধান্তমূলক কর্মসূচিতে না গিয়ে রয়েসয়ে কর্মসূচি টেনে নেওয়া হবে।রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা না করে আন্দোলনের নতুন পৃষ্ঠায় যাওয়া কঠিন মনে করি।’ইতিমধ্যে বিএনপি গত মঙ্গলবার থেকে সারা দেশে ‘দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও’ শিরোনামে প্রচারপত্র বিতরণের ছয় দিনের কর্মসূচি শুরু করেছে। ১৯ ফেব্রুয়ারি এই কর্মসূচি শেষ হবে। ছয়দলীয় জোট ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ ‘ব্যাংক লোপাট ও অর্থ পাচারের প্রতিবাদে’ গতকাল শুক্রবার ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে। ২০ জানুয়ারি থেকে রাজধানীতে ‘প্রহসনের নির্বাচন মানি না, গণতন্ত্রের পক্ষে গণস্বাক্ষর’ শিরোনামে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু করেছে নাগরিক ঐক্য।
এ ছাড়া ১২-দলীয় জোট, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, এবি পার্টি, গণ অধিকার পরিষদসহ অন্যান্য দলও পৃথকভাবে সরকারের ‘প্রহসনের’ নির্বাচনের বিরুদ্ধে নানা কর্মসূচি পালন করছে।গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘আন্দোলনটা কীভাবে পুনর্গঠন করা যায়, সেটা নিয়ে আমরা অন্যান্য দলের সঙ্গে আলোচনা করব। ইতিমধ্যে বিএনপির সঙ্গে গত ১৩ জানুয়ারি আমাদের বৈঠক হয়েছে। আবারও মুলতবি বৈঠক হবে।’
শরিক দলগুলোর নেতারা বলছেন, আন্দোলনে ব্যর্থতার পর সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য দুটি বিষয় অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে। একটি হলো, যার যার সংগঠন পুনর্গঠন। অন্যটি হচ্ছে আন্দোলন ‘পুনর্গঠন’ করা। বিগত আন্দোলনে স্পষ্ট হয়েছে যে সংগঠন শক্তিশালী করা না হলে আন্দোলনে সফল হওয়া সম্ভব হবে না। ফলে কার্যত সংগঠন পুনর্গঠনের ওপর আন্দোলন পুনর্গঠনের বিষয় অনেকটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
১২-দলীয় জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন (সেলিম) বলেন, আন্দোলনের নেতৃত্বকারী দল হিসেবে বিএনপিকে আরও সংগঠিত হতে হবে। তাদের রণাঙ্গনের সৈনিকদের প্রস্তুত করতে হবে। তা না হলে বিএনপি নিজেও সফল হবে না, তাদের অংশীদার হিসেবে অন্য দল ও জোটগুলোও সফল হবে না।
prothomasha.com
Copy Right 2023