Skip to content

‘আগুনে’ হল্যান্ডের ৫ আর ‘নিখুঁত’ ডি ব্রুইনার ৪, লুটনে লুটেরা সিটি

    ‘আগুনে’ হল্যান্ডের ৫ আর ‘নিখুঁত’ ডি ব্রুইনার ৪, লুটনে লুটেরা সিটি prothomasha.com

    স্কোরলাইন দেখে ভাবনাটা আসতে পারে। লুটন টাউনের মাঠে ঢুকে স্রেফ ‘লুট’ করে এসেছে ম্যানচেস্টার সিটিস্বাভাবিক যুক্তি হলো অনেকেই আছেন। কিন্তু এই অনেকের ভেতর থেকেই যদি দুজনকে বেছে নিতে হয়, তাহলে গোল করা এবং গোল বানানোর কাজে সিটির সেরা দুজনের নামই উঠে আসবে। হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন—আর্লিং হলান্ড ও কেভিন ডি ব্রুইনা। মাত্র দেড় মৌসুমের ব্যবধানে সিটির জার্সিতে দ্বিতীয়বারের মতো ৫ গোল করলেন হলান্ড। আর কেভিন ডি ব্রুইনা? চোট কাটিয়ে ফিরে এ পর্যন্ত মাত্র ১২ ম্যাচে মাঠে নেমেই সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে গোল বানানোয় সতীর্থদের ছাপিয়ে গেছেন বেলজিয়ান তারকা (১১)। গতকাল রাতে সিটির কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার পথে একাই ৪ গোল বানিয়ে ফিল ফোডেন এবং হুলিয়ান আলভারেজদের ছাপিয়ে গেছেন ডি ব্রুইনা। এ মৌসুমে ফোডেনের ১০ গোল বানাতে লেগেছে ৩৭ ম্যাচ, সমানসংখ্যক গোল বানাতে আলভারেজকে খেলতে হয়েছে ৩৫ ম্যাচ। পুরো ছন্দে না থাকা ৩২ বছর বয়সী ডি ব্রুইনার ‘ক্লাস’ কোন পর্যায়ে বোঝা গেল!

    হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে লুটন। প্রথমার্ধের ৪০ মিনিটের মধ্যে হ্যাটট্রিক তুলে নেন হলান্ড। বিরতির পর ৫৫ ও ৫৮ মিনিটে করেন আরও ২ গোল। এ ম্যাচে ডি ব্রুইনা ও হলান্ডের দারুণ রসায়নের ‘কাবাব’ এ দুটো ‘হাড্ডি’ও আছে—বের্নার্দো সিলভা ও জন স্টোনস। ৫৮ মিনিটে হলান্ডের শেষ গোলটি বানিয়েছেন সিলভা। ৭২ মিনিটে মাতেও কোভাচিচের গোলের উৎস স্টোনস। তাঁরা দুজনও অবদান রাখার চেষ্টা না করলে এ ম্যাচটা শুধু হলান্ড-ব্রুইনার গল্প হয়ে থাকত। আসলে সিটি যেভাবে খেলেছে এবং গোলের পর গোল করেছে তাতে রসিকতাসুলভ এমন ভাবনার বিলাসিতা করতেই পারেন ক্লাবটির সমর্থকেরা! ওহ, বলাই হয়নি। ম্যাচের ৪৫ ও ৫২ মিনিটে লুটনও দুটি গোল করেছে।

    সিটির হয়ে এ নিয়ে ৮টি হ্যাটট্রিক হয়ে গেল হলান্ডের। ক্লাবটির ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে এক ম্যাচে দুবার করে ৫ গোল করলেন। ১৯৭০ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কিংবদন্তি জর্জ বেস্টের পর শীর্ষ লিগের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে এফএ কাপে এক ম্যাচে একাই ৫ গোল করলেন হলান্ড। নর্দাম্পটন টাউনের বিপক্ষে একাই ৬ গোল করেছিলেন বেস্ট। সিটির হয়ে হলান্ড এর আগে ৫ গোল করেছিলেন গত বছর চ্যাম্পিয়নস লিগে লাইপজিগের বিপক্ষে। ২০২২ সালের জুলাইয়ের অভিষেকের পর থেকে এ পর্যন্ত সিটির হয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৮৩ ম্যাচে ৭৯ গোল করলেন হলান্ড। এ সময়ে প্রিমিয়ার লিগে খেলা অন্য যে কোনো খেলোয়াড়ের চেয়ে ৩০ গোল বেশি করেছেন নরওয়ে তারকা।

    তবে হলান্ড রেকর্ড বইয়ের একটি পাতায় তাকিয়ে কিন্তু মন খারাপ করতে পারেন। এফএ কাপে এক ম্যাচে কোনো খেলোয়াড়ের সর্বোচ্চ গোল করার তালিকায় হলান্ড কিন্তু ধারেকাছেও যেতে পারেননি! ১৯৭১ সালে মারগেটের বিপক্ষে বোর্নমাউথের ১১-০ গোলের জয়ে যে একাই ৯ গোল করেছিলেন টেড ম্যাকডুগাল! তবে হলান্ডের ভুলচুক হয় কম। বলতে গেলে হয়-ই না! নইলে লুটনের জাল বরাবর মাত্র ৭টি শট থেকে ৫ গোল আদায় করে নেন কীভাবে! অবশ্য এফএ কাপের ম্যাচে সিটির হয়ে ম্যাচে ৫ গোল করার গৌরব হলান্ডের একার নয়। ১৯২৬ সালে ফ্র্যাঙ্ক রবার্টস এবং ১৯৩০ সালে বব মার্শাল ৫ গোল করেছিলেন বিশ্বের প্রাচীনতম এই ফুটবল প্রতিযোগিতায়।ম্যাচ শেষে আইটিভিকে হলান্ড বলেছেন, ‘আমি নিজের সেরা ফর্মে ফিরতে শুরু করেছি এবং শেষ পর্যন্ত ভালো বোধ করছি। সামনে দারুণ সময় অপেক্ষা করছে। আমরা আক্রমণের জন্য তৈরি।’ হলান্ডের প্রথম চার গোলের উৎস ছিলেন ডি ব্রুইনা। সতীর্থকে নিয়ে সিটি স্ট্রাইকার বলেছেন, ‘তার সঙ্গে খেলা সব সময়ই আনন্দের। আমরা একে অপরের কাছে কি চাই সেটা জানি।’দুজনের এই চাওয়ার ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করেছেন সিটি কোচ গার্দিওলা, ‘আর্লিং আগুনে ফর্মে আর ডি ব্রুইনা নিখুঁত ছিল। দুজনের রসায়নটা যেমন—হলান্ডের ডি ব্রুইনার মতো খেলোয়াড় প্রয়োজন, আর ডি ব্রুইনার হলান্ডের মতো খেলোয়াড় প্রয়োজন।’

    গতকাল রাতে এফএ কাপ পঞ্চম রাউন্ডের এই ম্যাচটা দেখে থাকলে এতক্ষণে বুঝে ফেলার কথা কি লুট করার কথা বলা হচ্ছে।সিটির জয়ের ব্যবধান ৬-২। এক খেলোয়াড় একাই ৫ গোল করেছেন এবং স্কোরলাইন দেখেই বোঝা যাচ্ছে, সে খেলোয়াড়টি স্বাভাবিকভাবেই সিটির। আরও আছে—এক খেলোয়াড় একাই ৪ গোল বানিয়েছেন এবং স্কোরলাইন বলে দেয় এই খেলোয়াড়টিও সিটির। ম্যাচটি না দেখে থাকলে একটি কুইজ—সিটির স্কোয়াড দেখে আন্দাজে বলুন তো, পেপ গার্দিওলার দলে একাই ৫ গোল করা এবং ৪ গোল বানানোর মতো খেলোয়াড় আছেন কোন দুজন?