যোগাযোগ করলে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ গতকাল সোমবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘যতটুকু জানি, ঋণ কর্মসূচির আকার বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক একটা অনুরোধপত্র পাঠাবে আইএমএফে। সেপ্টেম্বরে সংস্থাটির ছোট একটা দল আসবে ঢাকায়। তখন এ ব্যাপারে আলাপ হবে। আইএমএফের কাছে আনুষ্ঠানিক চিঠি যাবে আরও পরে।’ঋণ কর্মসূচির আকার বাড়বে বলে বাংলাদেশ কতটা আশা করতে পারে—এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, পাকিস্তান যদি আইএমএফ থেকে ৭০০ কোটি ডলারের ঋণ পায়, তাহলে বাংলাদেশও ভালো আশা করতেই পারে। আর ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশের ‘ট্র্যাক রেকর্ড’ পাকিস্তানের চেয়ে ভালো।
পাকিস্তানকে ৭০০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে আইএমএফ গত জুলাইয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সরকারের সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। তবে তা অবশ্য নির্ভর করছে আইএমএফের পরিচালনা পর্ষদের ওপর। আইএমএফের পর্ষদ অনুমোদন করলেই কেবল ঋণ মিলবে। এ ঋণ পেলে আইএমএফ থেকে পাকিস্তানের জন্ম–পরবর্তী ৭৭ বছর বয়সে ২৪ বার ঋণ নেওয়া হবে।এদিকে বাংলাদেশে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার এমন একসময়ে দায়িত্ব নিয়েছে, যখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত পরিস্থিতি নাজুক। আর বকেয়া ঋণ মেটাতে স্থানীয় ব্যাংক থেকে ডলার কিনতে হচ্ছে।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল আগামী মাসের শেষ দিকে ঢাকায় আসছে। দলটি এক সপ্তাহের মতো ঢাকায় থাকবে। তাদের ২২ সেপ্টেম্বর থেকে অর্থ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট অন্য দপ্তরগুলোর সঙ্গে বৈঠক করার কথা। ওই দলের সঙ্গেই ঋণ কর্মসূচির আকার বৃদ্ধি নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হবে।
আগামী ২১ থেকে ২৬ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হবে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম)। ওই সভায় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরসহ বাংলাদেশের একটি দল যোগ দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। এজিএমের ফাঁকে ফাঁকে আইএমএফের সঙ্গে সাইডলাইন বৈঠকে ঋণ কর্মসূচির আকার বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হবে। পরের মাসে, অর্থাৎ নভেম্বরে আসবে আইএমএফের আরেকটি দল। তবে সেটি আসবে চলমান ঋণ কর্মসূচির তৃতীয় পর্যালোচনা বৈঠক করতে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর গত রোববার মুঠোফোনে বলেন, ‘আমরা আইএমএফের সঙ্গে চলমান ঋণ কর্মসূচিটিকে ৭০০ কোটি ডলারের বেশিতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব। নতুন করে আমরা অন্তত ৩০০ কোটি ডলার চাইতে পারি। আইএমএফের যে দল সেপ্টেম্বরে আসবে, তাদের সঙ্গে এবং অক্টোবরে ওয়াশিংটনে আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের এজিএম চলাকালে এগুলো নিয়ে আলাপ হবে।’
আইএমএফের পর্ষদ ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। এর দুই দিন পরই ঋণের প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে আসে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। চলতি বছরের জুনে তৃতীয় কিস্তিতে ছাড় হয় ১১৫ কোটি ডলার। তিন কিস্তিতে আইএমএফের কাছ থেকে প্রায় ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। প্রতিশ্রুত ঋণের মধ্য আর বাকি আছে ২৩৯ কোটি ডলার; যা ২০২৬ সাল নাগাদ আরও চার কিস্তিতে পাওয়া যাবে।
আইএমএফের আবাসিক প্রতিনিধি জয়েন্দু দে বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের সময় গত ৩১ জুলাই অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদারকে এক চিঠিতে জানিয়েছিলেন, ঋণ কর্মসূচির তৃতীয় পর্যালোচনা বৈঠক করতে ২ থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত আইএমএফের একটি দল ঢাকায় আসতে চায়। ৮ আগস্টের মধ্যে বিষয়টি নিশ্চিত করার অনুরোধও করা হয়েছিল চিঠিতে।কিন্তু ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয় ৮ আগস্ট। অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নতুন পরিস্থিতিতে অর্থ বিভাগ আর এ সময়সূচির ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়নি।
জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন কে বলেন, প্রথমে দেখতে হবে, বাংলাদেশের জন্য আইএমএফের ঋণ বরাদ্দের সীমা ইতিমধ্যে পার হয়ে গেছে কিনা। তবে সরকার উদ্যোগ নিয়ে থাকলে বুঝতে হবে যে আরও ঋণ নেওয়ার সুযোগ আছে। নতুন নাকি চলমান কর্মসূচির আকার বৃদ্ধি—কোনটা হলে দ্রুততম সময়ে ঋণ নেওয়া যাবে, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ; কিন্তু ঋণের আকার বাড়লে আরও সংস্কারের শর্ত যোগ হবে। ব্যাংক কমিশনসহ বিভিন্ন সংস্কারে সরকার হাত দিয়েছে। ফলে ঋণ পেতে সমস্যা হবে না এবং পেলে দেশের জন্য ভালো হবে।অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কর্মকর্তারা হিসাব করে দেখেছেন, আইএমএফ থেকে আরও ৩০০ কোটি ডলার ঋণ নেওয়ার সুযোগ আছে বাংলাদেশের।